২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ফুলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাওয়ায় সাংবাদিকদের মারধর করেছে ফুল ব্যবসায়ীরা

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ণ
ফুলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাওয়ায় সাংবাদিকদের মারধর করেছে ফুল ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাতারাতি দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে ফুল দোকানিদের হাতে মারধর ও হেনস্থার শিকার হয়েছেন চারজন সংবাদ কর্মী। রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত ফুল মার্কেটে মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার চার সাংবাদিকের মধ্যে একজনের চোখ ও মুখে গুরুতর চোট পেয়েছেন। আহত চারজনই বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট করে ফুলের দাম বাড়ানোর অভিযোগ প্রতি বছরই কমবেশি শোনা যায়। তবে এবার সেটি আগের সব রেকর্ড ছড়িয়ে গিয়েছিল। গত দুই দিনের ব্যবধানে শাহবাগের ফুল মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন ফুলের দোকানে সব ধরনের ফুলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এক রাতেই ৩০০ ফুলের এক বান্ডিল লাল গোলাপের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা । এতে বিপাকে পড়া ক্রেতারা  ফুলের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন।
ফুলের দাম নিয়ে ক্রেতাদের ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর এ বিষয়ে অনুসন্ধানে তারা শাহাবগের ফুল মার্কেটে যান।

নিউজ বাংলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম এবং বিডিনিউজ ২৪ বাংলার রাসেল সরকার।৷ দোকান মালিক সমিতির নেতা শেখ মো. মেরিনের মালিকানাধীন ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়ার পরই বিনা উস্কানিতে তাদের উপর চড়াও হন স্টলে থাকা ফুল বিক্রেতা কর্মীরা। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আশেপাশের ফুল দোকানিরাও। সহকর্মীদের রক্ষায় সেখানে রেডিও টুডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. ইমদাদুল আজাদ ও সারা বাংলার রাহাতুল ইসলাম রাফি গেলে তারাও মারধরের শিকার হন।

এর মধ্যে উপর্যুপরি কিল-ঘুষিতে ইমদাদুল আজাদের চোখে রক্তক্ষরণ হয়।

অভিযুক্তরা হলেন- পায়েল (৩৫), সাল্লু (২৭), আব্দুর রাজ্জাক (৩৫), বুলু (৩২), দিদার (৩১), বাবু (৩০), জাহাঙ্গীর (৩২)। তারা সবাই শাহবাগ ফুল মার্কেটের কর্মচারী। ঘটনার ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন করেছেন। এতে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি পেশাগত কাজে আমার সহকর্মী বিডি নিউজ বাংলা-২৪ এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. রাসেল সরকারকে সাথে নিয়ে শাহবাগ মোড়ের ফুল মার্কেট এর ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপে ফুলের দাম বাড়ার কারণ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহে যাই। ওই দোকানে কর্মরত পায়েল নামে একজনের সাথে কথা বলতে চাইলে সে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে দেন। এরপর আমাদেরকে ‘ভুয়া সাংবাদিক’ বলে আখ্যায়িত করে। আমরা মৌখিকভাবে এর প্রতিবাদ করলে সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি চড়-থাপ্পর মারতে শুরু করে। আমার কলিগ (রাসেল) তার প্রতিবাদ করতে গেলে পায়েল, সাল্লু, আঃ রাজ্জাক, বুলু, দিদার, বাবু এবং জাহাঙ্গীরসহ আশেপাশের দোকানের কর্মচারীরা এসে আমাদের দু-জনকে মারপিট করে।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমার অন্য কলিগ মোঃ ইমদাদুল আজাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক পরিচয়ে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকেও মারপিট করে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় বিবাদীরা পিছন দিক থেকে আমাদের উপর আবার অতর্কিত হামলা করে। এসময় ইমদাদকে রাস্তায় ফেলে এলোপাথাড়ি মারপিট করে, তার ডান চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী আমাদেরকে চিনতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে এবং আহত ইমদাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।

ঘটনা প্রসঙ্গে মারধরের শিকার হওয়া ইমদাদুল আজাদ বলেন, আমি যখন শুনলাম যে, নিউজ বাংলার ঢাবি   প্রতিনিধি আমাদের মনিরুল ইসলাম ভাইকে মারধর করা হয়েছে, আমি তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে যাই। কিছুক্ষণ পরে সেখানে সারা বাংলার প্রতিনিধি রাহাতুল ইসলাম রাফি ভাই উপস্থিত হন এবং আগে থেকেই বিডি নিউজ বাংলা-২৪ এর রাসেল ভাই সেখানে ছিলেন। তখন কিছুক্ষণ আমরা ঘটনা প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলাম এবং কি হয়েছে এটা মনির ভাইয়ের কাছ থেকে শুনছিলাম। এমন মুহূর্তে দেখলাম যে, মনির ভাইকে যে ছেলেটা মারধর করেছে, সেই ছেলেটা অন্যদিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

ওই সময় আমি ও আমার দুই সিনিয়র সহকর্মী রাফি  এবং রাসেল মিলে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে এগিয়ে যাই। এরপর সে পালাচ্ছে না এরকম বুঝতে পেরে আমরা ফিরে আসার সময় তখন ওই ছেলে খাবারের দোকানের কয়েকজন কর্মচারী এবং ওই ফুলের দোকানের আরও কয়েকজন পেছন থেকে এসে আমাদের ওপর হামলা করে আমাদেরকে মারধর করে। আমাকে তারা এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি এবং লাথি মারা শুরু করে। তাদের একটি ঘুষি আমার চশমায় লেগে তা ভেঙ্গে যায়। একপর্যায়ে, আমার চোখের দুই পাশে কেটে গেলে আমার সহকর্মীরা আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করে।

অভিযোগের বিষয়ে শাহবাগ ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের মালিক মো. মেরিন শেখ বলেন,আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঢাকার বাইরে আছি। শুনেছি দোকানে ঝামেলা হয়েছে। আমাদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শাহাবাগের মতো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফুটপাত অবৈধ দখল করে ব্যবসা করে এসব ফুল দোকানের নানা অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এর পাশেই রয়েছে শাহবাগ থানা। তবে দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট করে ফুলের বেপরোয়া দাম বৃদ্ধি, নিয়ম না মেনে ব্যবসা, কর্মচারীদের উশৃঙ্খলা আচরণ নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কখনো কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

Sharing is caring!