২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ডিম-মাংসের দাম স্থিতিশীল সবজি-মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪, ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ
ডিম-মাংসের দাম স্থিতিশীল সবজি-মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী

বিশেষ প্রতিনিধি:
খাবারের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে মাছের দাম। মাছের দাম বাড়লেও উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে ডিম ও মাংসের দাম। শীত শেষে রাজধানীর বাজারগুলোয় উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীন সবজি। আগাম গ্রীষ্মকালীন সবজি পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বী। তবে আলুর দামে স্বস্তি ফিরেছে। প্রকারভেদে কেজিতে ৫ টাকা কমে ২৬ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম কমলেও ঝাঁজ কমেনি পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের। গতকাল সোমবার রাজধানীর সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, ধূপখোলামাঠ বাজার, শ্যামবাজার ও নয়াবাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা এ তথ্য জানা গেছে। সর্বপ্রথম মাছ বাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারে প্রতিটি মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৭০০ থেকে ২৩০০ টাকা, রুই মাছ প্রকারভেদে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ২৫০ থেকে ১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০ থেকে১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রায়সাহেব বাজারের মাছ বিক্রেতা বিজয় দাস বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। মাছের দামও বেশি। ঘাটে মাছ নেই বললে চলে। ফলে ঘাটে দাম অনেক বেশি। আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনে আনি এজন্য বেশি দামে বিক্রি করি। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশ মাছের দাম। বাজারে দুই রকমের ইলিশ পাওয়া যায়। একটা সাগরের ইলিশ ও একটা নদীর ইলিশ। দাম বেশি নদীর ইলিশের। কিন্তু অনেকেই সাগরের ইলিশকে নদীর বলে বিক্রি করছে। আসলে মাছের খাদ্যের দাম বাড়ছে ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আমাদের এখানে কিছু করার নেই। আগে যে ক্রেতা দুই কেজি মাছ নিতো দাম বাড়লে সেই ক্রেতা নিচ্ছে এক কেজি। এতে আমাদের লাভ কম হয়। শ্যমবাজারে মাছ কিনতে আসা মো: শাহীন বলেন, আজ বাজারে এসে দেখি মাছের দাম অনেক বেশি। আগে যেখানে ৩৫০-৪০০ টাকায় এক কেজি রুই মাছ কিনতে পারতাম, এখন তা কেজিতে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে ৪৫০-৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আগের মতো মাছ কিনতে পারছি না। এখনই বাজরের এই অবস্থা রোজার সময় কি জানি হয়। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের কোনো দিকে স্বস্তি নেই। আজকে মাছের দাম বাড়লে কালকে চালের দাম বাড়ে। এভাবে কত দিন হবে জানি না। এদিকে মাছের দাম বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে ডিম ও মাংসের দাম। পুষ্টির এই অন্যতম পণ্য দুইটির দাম স্থিতিশীল থাকলে যে দাম সেটা নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়, হালি ৪৮ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন ২১০ টাকা, আর হালি ৭০ টাক এবং দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২৫৫ টাকা, আর হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সূত্রাপুর বাজারে মুরগি বিক্রেতা মো: আব্দুল্লাহ বলেন, মুরগি দাম এখন আর বাড়ে নাই। বিয়ের মৌসুম হলে চাহিদা বাড়ে তখন একটু দাম উঠা নামা করে। খামারে দাম বড়লে আমরাও দাম বাড়াই। আমাদের কিছু করার নেই। সরকারকে খামারিদের গিয়ে ধরতে বলেন। ধূপখোলা মাঠ বাজারে গরু ও খাসির মাংস বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং বরকির মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধূপখোলামাঠ বাজারে মাংস কিনতে আসা পার্থ শেখ বলেন, ভাই জিনিসের যে দাম মাংস খাওয়া ভুলে যেতে হবে। এখন বিশেষ দিন ছাড়া মাংস কেনা হয় না। বিশেষ দিন বলতে ছুটির দিন, বাসায় মেহমান এবং শবেবরাত, ঈদ ইত্যাদি। আগে সপ্তাহে তিন দিন মাংস খাওয়া হতো এখন মাসে একদিন মাংস খাচ্ছি। তারপরও সেটা কিনতে হলে দুইবার ভাবতে হচ্ছে। আমরা এখন মাছ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ তারপরও কেনো এত দাম। শুধু কি গবাদি-পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে তাই; না কি অন্য কোনো কারণ রয়েছে? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র শবে বরাতের ছুটির জন্য বাজারগুলোয় ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। ক্রেতা কম থাকলেও কমেনি কোনো সবজির দাম। বরং শীতকালীন প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজিগুলো ১০০ টাকার নিচে কিনতে পারছেন না ভোক্তারা। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ফুলকপি-বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ব্রকলি ৫০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৪০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ১৪০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকায়, কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, খিরাই ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধনে পাতা কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ৫০ টাকা এবং গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে কচুরমুখী ১০০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, ধুন্দুল ১০০ টাকা, জালি কুমড়া ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, পটল ১৪০ টাকা এবং সজনে ডাটা ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া বাজারগুলোয় লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে রায়সাহেব বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. কালাম বলেন, ছুটির জন্য বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম, ফলে বেচাকেনা কম। শীতকালীন সবজি এখনও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তবে দাম বেড়েছে। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন সবজিও আছে কিন্তু দাম বেশি। শুধু আলুর দাম কমেছে। অন্যসব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এদিকে পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হয়েছে। তারপরও সংকট দেখিয়ে বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি চায়না আদা ১৮০ টাকা ও ইন্ডিয়ান আদা ২০০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি চায়না রসুন ১৮০ টাকা ও দেশি রসুন ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সূত্রাপুর বাজারের আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বিক্রেতা বলরাম দাস বলেন, বাজারে এখন নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে। তাই ৫ টাকা কমে প্রকারভেদে প্রতিকেজি আলু ২৬ টাকা থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম কমলেও কমেনি পেঁয়াজের দাম। এখন পেঁয়াজের মৌসুম তারপরও কমছে না দাম। তিনি আরও বলেন, আজকে বাজারে ক্রেতা কম। কারণ, গত রোববার সারারাত শবেবরাতে নামাজ পড়েছে, গতকাল সোমবার ছুটির দিন জন্য কেউ সকালে বাজারে আসেনি বিকেলে কিছু ক্রেতা আসবে বলে জানান তিনি।

Sharing is caring!