এনবি ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জনগণের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় দ্য বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধে অনুদান ভিক্তিক অর্থ চায় বাংলাদেশ। বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, বিশ্বব্যাপী নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিম উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। অন্যদিকে ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা আমাদের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
আর্থিক সহযোগিতা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে হবে।
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে সম্পদ-দক্ষ কৃষিকাজকে উৎসাহিত করতে হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে। পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে- একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে। আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়। প্রত্যেক যুবককে তিন-শূন্য নীতিতে গড়ে উঠতে হবে: শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য সম্পদের কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।
শুক্রবার বেইজিংয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। পরদিন ২৯ মার্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূস পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিকেইউ) বক্তৃতা দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে। প্রধান উপদেষ্টার আগামী ২৯ মার্চ দেশে ফেরার কথা রয়েছে ।
Sharing is caring!