২৬শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩রা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

প্রবীণ সাংবাদিক বিভূরঞ্জন সরকারের করুন মৃত্যুতে ব্যথিত

admin
প্রকাশিত আগস্ট ২২, ২০২৫, ০২:৪২ অপরাহ্ণ
প্রবীণ সাংবাদিক বিভূরঞ্জন সরকারের করুন মৃত্যুতে ব্যথিত

রেজাউল করিম

ষাট পেরোনো বয়সে এই দেশে কত মেধাবী মানুষই না কঠিন জীবনযাপন করেন। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের কল্যাণে রাষ্ট্রের কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা নেই। অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য রয়েছে উৎসব ভাতা বাড়িয়ে বছরে তিনবার, নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি, মহার্ঘ্য ভাতা, এবং অবসর-পরবর্তী পেনশন। এমনকি মৃত্যুর পরও স্ত্রী বা স্বামী নির্দিষ্ট সুবিধা পেয়ে থাকেন। সরকারি চাকরিজীবীরাই যেন দেশের নাগরিক। আর বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারগুলো ৫৪ বছরে কোনো পরিকল্পনা করেনি।

অন্যদিকে, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ভাগ্যে থাকে অনিশ্চয়তা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাদের জন্য আর কোনো সুরক্ষা নেই। সন্তান যদি ভাগ্যক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয় তবে কিছুটা সহায়তা মেলে, নইলে জীবনের শেষ দিনগুলো পেরোতে হয় নীরব যন্ত্রণায়। সাংবাদিকতা পেশা তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। আজকের দিনে অনেক সাংবাদিক অর্থ, প্রভাব আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বাড়ি-গাড়ি, প্লট, এমনকি শত কোটি টাকার সম্পদ গড়তে পেরেছেন—কিন্তু এই ছবিটিই সবার বাস্তবতা নয়। যারা সততা, নিষ্ঠা ও শ্রম দিয়ে কলম চালান, তাদের অনেকের পরিণতি হয় হতাশাজনক।

বিভূরঞ্জন সরকারের জীবন ও মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—একজন মেধাবী, নিবেদিত সাংবাদিকের পরিণতি কতটা নির্মম হতে পারে। শরীরের অসুস্থতা তাকে ক্রমশ বেকায়দায় ফেলেছিল, আর সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা তার জীবনের শেষ পর্বটিকে আরো কঠিন করে তুলেছিল।

এ মৃত্যু কেবল একজন মানুষের না ফেরার দেশে যাওয়া নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অবহেলার এক নগ্ন প্রতিচ্ছবি। এ ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এখনই ভাবতে হবে—যারা সারাজীবন শ্রম দিয়েছেন, বিশেষ করে বেসরকারি খাতে, তাদের বার্ধক্যের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়। নইলে এই করুণ গল্পগুলো বারবার ফিরে আসবে, আমাদের বিবেককে দংশন করবে, অথচ কার্যকর কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।

রেজাউল করিম
লেখক ও গবেষক

Sharing is caring!