২৭শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে লাশ গোপন করার বিষয়টি সত্য নয় : বাংলাফ্যাক্ট

admin
প্রকাশিত জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ণ
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে লাশ গোপন করার বিষয়টি সত্য নয় : বাংলাফ্যাক্ট

এনবি ডেস্ক: মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে লাশ গুমের দাবির ভিত্তি কী, কীভাবে ছড়ালো তা সনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)’র ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ‘উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ছয় জনের লাশ শনাক্ত করা বাকি রয়েছে।’

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনায় লাশের সংখ্যা গোপন বা মরদেহ ‘গুম’ করা হয়েছে- এমন বিভিন্ন দাবি ঘুরে বেড়াচ্ছে।

লাশ গুমের এই অভিযোগ কারা করছেন, এর ভিত্তিই বা কী?- এ বিষয়ে বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন এসব দাবি করছেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কালবেলা অনলাইনের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে একজন নিজেই ২৫টি লাশ বের করার কথা বলেন, যা ২১ ঘণ্টায় ১০ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে। আরেকটি ভিডিওতে একজনকে ৫০টির বেশি লাশ বের করার দাবি করতে দেখা যায়।

এ ধরনের দাবিগুলো অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ তৈরি করে। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেইজগুলো থেকেও ক্রমাগত এ গুজব ছড়ানো হতে থাকে।

এমনকি ‘রাত ২টায় অ্যাম্বুলেন্সে লাশ সরানো হচ্ছে’- এমন ভুয়া তথ্যও শেয়ার করা হয় দলটির অফিসিয়াল পেইজ থেকে।

সজীব ওয়াজেদ জয় ‘আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত হয়েছে’- এমন ভুয়া তথ্যও শেয়ার করেন তার পেইজে।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, দেশের কোনো মূলধারার গণমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা গোপনের প্রমাণ-ভিত্তিক কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। মানবজমিন ও বাংলা ট্রিবিউনের অনলাইন সংস্করণে “শিক্ষার্থীরা সন্দেহ করছে”  ও “গুজব ছড়িয়েছে” বলে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

কালবেলার অনলাইন সংস্করণে “লাশের সংখ্যা নিয়ে দিনভর আলোচনা” শিরোনামের খবরে নিহতের সংখ্যা কমিয়ে বলার “অভিযোগ উঠেছে” বলা হলেও কারা অভিযোগ তুলেছে বা দাবিটির ভিত্তি আছে কি-না, তা নিয়ে কিছু লেখা হয়নি।

তবে অভিযোগের প্রত্যুত্তরে সরকারের বক্তব্য সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘ঘটনাস্থলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা ছয়জন গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে বাংলাফ্যাক্ট। তারা কেউই লাশ গোপনের কোনো আলামত দেখেননি বলে জানান। একইসঙ্গে সেখানে লাশ গোপন করা সম্ভব নয় বলেও মত দেন।

তারা জানান, যে সময় বিমান বিধ্বস্ত হয়, সে সময় অল্প কিছু শিক্ষার্থী স্কুলে ছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে সকলের তথ্য আছে, তাই লাশ গোপন করার বিষয়টি সত্য নয়।

এ বিষয়ে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মো. মাসুদ আলম বাংলাফ্যাক্টকে বলেন, ‘লাশ গোপন করার বিষয়টি মিথ্যা, এটা কোনোভাবে সম্ভব নয়। আমাদের কয়জন শিক্ষার্থী আছেন, কয়জন আহত আছেন-  তাসহ আমাদের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকাও আছে। আমাদের সিসিটিভি আছে। আমাদের অনুমতি ছাড়া কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না, বেরও হতে পারে না। কন্ট্রোল রুম ও মিটিং রুম আছে। সার্বক্ষণিক কাজ করছি, খোঁজ খবর রাখছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোন হাসপাতালে কত জন, তারও তালিকা আছে। কোনো অভিভাবক কারও খোঁজে আসলে, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তের কাজ চলছে। তাই লাশ গোপন করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘লাশ গুম’ সংক্রান্ত যে অভিযোগ ছড়িয়েছে, তা এখনো প্রমাণহীন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণ, কলেজ কর্তৃপক্ষের তথ্য ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- এসব দাবির কোনো নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই। শিক্ষার্থীরা তাদের ৬ দফা দাবিতে আহত-নিহতদের সঠিক পরিসংখ্যান চেয়েছে।

এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে মাইলস্টোনে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এটি এ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি নিরসনে কাজ করবে। মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষও হতাহত ও নিখোঁজদের তালিকা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করেছে।

বাংলাদেশে চলমান গুজব, ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ ও জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্ব পালন করছে বাংলাফ্যাক্ট। সূত্র: বাসস

Sharing is caring!